Dreams For Tomorrow
তাসফিকুর রহমান ছিদ্দিকী
পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যা তাঁরা। ছিল না মেঘের আনাগোনা। যথানিয়মে চলছিল প্রাকৃতিক আবহমন্ডল। নিত্যদিনের মতো সমবয়সী বন্ধুরা সেদিন ও প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম জ্ঞান অন্বেষণে। যাত্রাপথে হরেক রকমের চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় ঘুরপাক খায়। ভাবতাম যদি আমাদের সম্পদের পাহাড় থাকতো, মন যদি হতো আকাশের ন্যায়,, সমুদ্রের অজস্র জলের মতো বিলিয়ে দিতাম দূর্বলচিত্তের মানুষের মাঝে। মানবপ্রেম, সে তো বড়ই অপ্রতুল। বিলাসিতার প্রকট থাবায়, হিংসের রোষানলে সে তো আজ বিলুপ্ত প্রায়। এসব ভাবনার যেন শেষ নেই। ভাবনা আর নতুন চিন্তার মাঝে আমাদের পথ ফুরিয়ে যায়। নিত্য ভাবনার মাঝেই আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে.......
স্যারকে সালাম দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করলাম। গণিত শিক্ষক শাওন স্যার মজার মজার গাণিতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। স্যারের ম্যাথ সলভ করার অসাধারণ কৌশল কারো যেন অজানা নয়। কিন্তু আজ ভিন্ন চিত্র। গণিত বাদ দিয়ে মনোযোগ দিচ্ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রতকরনে। "ভালো মানুষ হ বাপুরা, ভালোমানুষ। পড়ালেখা করে, এক্সাম নিয়ে লাভ নেই যদি ভালো মানুষ বানাইতে না পারি। হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন 'মানুষ ই একমাত্র জীব যে খিদের জন্যও হত্যা করে'।তোমরা মানুষ হও, মানুষ রুপি জানোয়ার নয়।" কেউ কিছু বুঝতে পারলাম না। পরে স্যার ব্যাখ্যা করে বললেন ভারতের কেরালার মালাপ্পুরমের সেই অন্তঃসত্ত্বা হস্তিনীটির কথা। যে কিনা খাবারের সন্ধানে গ্রামে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা আনারসের মধ্যে বাজিপটকা স্টাফ করে তাকে খেতে দেয়। অতঃপর বাজি গুলো তার মুখ দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে যেতে সে মারা গেল। পৃথিবী, তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই। মানুষ হয়ে জন্মেছি এ বড় লজ্জার। সবার মুখ কেমন মলিন হয়ে গেল।
মানুষের নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?
ক্লাস শেষে সবাই বাড়ি ফিরছিলাম। আজ সবার মন ভালো নেই। তাছাড়া আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার। দেখা যাচ্ছে না জোনাকির আলো ও। একটা দিয়াশলাইর লাইট ছিল একমাত্র সম্বল। ভয়ে ভয়ে পথ চলতে শুরু করলাম।মাঝপথেই চলে এলাম প্রায়। সামান্য লাইটের আলোতে কি যেন পড়ল সামনে। গিয়ে দেখি আরেক করুণ কাহিনী। একজন ছেলে রাস্তার ধারে পড়ে আছে যে কিনা হাটতে পারে না, কথাও বলতে পারে না, নেই কোন জামা কাপড় ও। হাতে একটা লাঠি আর পরনে একখানা হাফপ্যান্ট ছাড়া তার আর কিছুই নেই।
জানতে পারলাম তার মা-বাবা ও নেই। রাস্তায় তার দিন চলে যায়। এক এলাকা হয়ে অন্য এলাকা। যা পাই তাই খায়,,কোনো দিন বা অনাহারে চলে যায়। তার দুঃখ বুঝাবেই বা কারে। স্যারের কথার পর এঘটনা আমাদের মন কে আবার নাড়া দিল।
সে দিনের মতো চলে গেলাম।
পরদিন স্কুলে যাবার পথে লক্ষ্য করলাম সমবয়সী একজন ইটের ভাটায় কাজ করতেছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম বাবা দিনমজুর। ছেলে কে পড়ালেখা করানো টা টাকার অপচয় বলে ভাবে। সন্তানের অল্প বয়সে আয় করা টা লাভজনক মনে করে।
এবার সবার মাথায় নতুন চিন্তার ছাপ পড়ল। এরমাঝে শিমুল বলে উঠল, "এদের কি কোনো অধিকার নেই? সুস্থ দেহে সুস্থ মস্তিষ্কে বেড়ে উঠার,এ সুন্দর মায়ার পৃথিবী কে এক
টু খানি অনুভব করার?"
সাইদ বলল, "চল, কিছু একটা করি।পৃথিবী কি আমাদের কাছে কিছু চাই না?" আমরা সবাই একমত হলাম। যেই কথা সেই কাজ।শুরু করে দিলাম।গ্রামবাসীর ঘরে ঘরে গিয়ে বললাম আমাদের স্বপ্নের কথা। অধিকাংশই আমাদের উদ্যোগকে বাহবা জানাল।আবার অনেকেই তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিল।তাও আমরা থেমে থাকার নয়।গড়ে উঠল Dreams For Tomorrow নামের এক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংগঠন।
সিদ্ধান্ত মতো একটা সেচ্ছাসেবী টীম গঠন করা হলো। যাদের কাজ হলো প্রতিদিন সকালে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি গিয়ে একমুঠো চাল সংগ্রহ করে আনা। যার সম্পূর্ণটুকু ব্যয় হয় অন্নবস্ত্রহীন হত-দরিদ্রের মাঝে।যার ফলে অনেকের কপালে জুটেছে ভাত, অনেকের পড়াশোনা, আবার অনেকের পরিবর্তন হলো চিন্তাধারার।এভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকে। আমাদের সংগঠনের তথ্য জানতে পারলেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও।তিনি আমাদের এ মহান উদ্যোগ এর ভুয়সী প্রশংসা করলেনএবং আমাদের জন্য অর্থ বাজেট করলেন। সংগঠনের প্রতিটা সিকি পয়সাও ব্যয় হয় মানবতার কল্যাণে।প্রসারিত হতে লাগল আমাদের কর্মকাণ্ড। ধীরে ধীরে সময় যাচ্ছে...এগিয়ে যাচ্ছি আমরাও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে
No comments: