প্রত্যাবর্তন

জাহিদ হাসান




মানুষ জন্মের সাথে সাথে হাঁটতে বা কথা বলতে শিখে যায় না। মানুষ শিশু হয়ে জন্ম নেয়। তারপর আস্তে আস্তে সে হামাগুড়ি দিতে শিখে।তারও অনেক পর একজন শিশু গুটি গুটি পায়ে হাঁটে।একজন শিশু হাঁটতে প্রায় বারো মাস থেকে দেড় বছর সময় নেয়।

জন্ম নেওয়া থেকে শুরু করে হাঁটা শিখা পর্যন্ত  হাটুতে দাগ পড়ে যায় হামাগুড়ি দেওয়ার সময়। যখন হাঁটতে শিখে তখন অনেকবার তাকে মাটিতে গড়িয়ে পড়তে হয়।কিন্তু এই দাগ বা পড়ে যাওয়া তার হাঁটা শিখার বাঁধা হতে পারে কি?না কখনো পারে না।যে শিশু হাঁটা শিখার সময় পড়ে যায় না,হামাগুড়ি দেওয়ার সময় হাটুতে দাগ পড়ে না বড় হয়ে তার পায়ের হাড়গুলো নরম থাকে, শক্ত হয় না।পরে হাঁটতে বাধাগ্রস্ত হয় এই নরম হাড়ের কারণে।যার কারণে দেখা যায় অনেকে ভালোভাবে হাঁটতে পারে না।অল্পতে ঝুকে পড়ে।তাহলে সমীকরণ যদি হাঁটা শিখা হয় তাহলে সমাধান হলো পড়ে গিয়ে হাঁটতে শিখা।অর্থাৎ আমরা শিশু থাকা অবস্থায় হাটতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায় বিধায় আমরা নিপুণ ভাবে হাঁটতে শিখি।যার অর্থ দাঁড়ায় বারবার পড়ে যাওয়াটা বাঁধা না বরং এইটা হাঁটতে শিখার একটা কৌশল মাত্র। এখন ছোট শিশুটা হাঁটা শিখার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করল নতুন এক জীবনে।সে আগে হাটতে পারত না কিন্তু শেখার মাধ্যমে সে ফিরে আসল তার ভিন্নরুপ নিয়ে। এখানে প্রত্যাবর্তন বলতে আমরা কি বুঝি?

প্রত্যাবর্তন এর ইংরেজি শব্দ দাঁড়ায় come back বা return. অর্থাৎ ফিরে আসা।মানুষ তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক বার প্রত্যাবর্তন করে বা come back করে নানা অবস্থা বা অবস্থান থেকে।হাঁটা শিখার মত মানুষ তার ক্ষণস্থায়ী জীবনে শতবার হোঁচট খায় কিন্তু মানুষ সেখান থেকে ফিরে আসে, প্রত্যাবর্তন করে নতুন রুপে।যদিও হোঁচট খেতে খেতে অনেকের বিষণ্ণতা চলে আসে।অনেকে হারিয়ে ফেলে জীবনের মূল্য।অনেকের কাছে মৃত্যু,বেঁচে থাকার চেয়ে অধিক শ্রেয় মনে হয়,জীবন হয়ে পড়ে মূল্যহীন ।

কিন্তু অনেকে প্রত্যাবর্তন করে বীরের মত নতুনত্ব নিয়ে।প্রায় সকল মানুষ জীবনে কখনো না কখনো প্রত্যাবর্তন করে।তবে সবার ধরন কিন্তু এক থাকে না।মানুষ তার জীবনে হোঁচট খায়,কোন কাজে ব্যর্থ হয়।যার কারণে সবায় হতাশ হয়ে পড়ে,আশা প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলে।এই হতাশা খেলায় হেরে গিয়ে অল্প সময়ের জন্য হতাশ হওয়ার মতো নয়।এই হতাশা তার অাজীবনের।এই হতাশার কারণে মানুষ ভুলে যায় আনন্দ,উল্লাস জিনিসটা কি।মানুষ সুখের ধারে কাছেও যেতে পারে না।তার কাছে মনে হয় কেন বা আমি এত দুঃখ নিয়ে জন্ম নিলাম।কেন বা আমার জীবনে এত কষ্ট,কেন বা আমার থেকে কম জেনে,কম কষ্ট করে ওই ব্যক্তি এত আনন্দে?

এই হতাশা, দুর্ভাবনা আরো বেড়ে যায় যখন জিনিসটি তার প্রাপ্য কিন্তু কোন অঘটনের কারণে তার সেটি পাওয়া হয়ে ওঠে  না।যেমন ভালো ছাত্র রেজাল্ট ভালো করার জন্য সব প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও খারাপ রেজাল্ট করা,হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়া চাকরি বিচ্যুতি অথবা ব্যবসায় বৃহৎ লোকসান।

প্রায় ৯৫% মানুষ প্রত্যাবর্তন করে অনেকটা তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।বাকি ৫% মানুষ  প্রত্যাবর্তন না করে হাতে নিয়ে ফেলে আত্মহত্যার মত মহাপাপের কাজ।কিন্তু আত্মহত্যার জন্য তাদের সম্পূর্ণ দোষ দেওয়াটা ভুল হবে।এই হতাশা,বিষণ্ণতা অবস্থায় তাদের কষ্টটা বুঝার কেউ থাকে না।অনেকে আগুনের উপর কেরোসিন ছুটে কিন্তু বালি বা পানি দিয়ে আগুন নিভায় না।আবার অনেকের নিজের আপনজনরা ও এই কষ্ট বুঝে না।প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আপনজনের কথায় এই হতাশা, দুর্দশা বেড়ে যায় হাজার গুন ।তাই তার কাছে জীবনের মূল্য হয়ে পড়ে শূন্য।তার মনে হয় বেঁচে থাকলে তাকে জলন্ত আগুনে পুড়তে হবে।

কিন্তু বললাম না ৯৫% মানুষ প্রত্যাবর্তন করে।তারা প্রত্যাবর্তন করতে পারে কারণ তারা এমন মানুষকে পায় যে তার কথা শুনবে, যে তাকে শক্তি দিবে যে শুনাবে বাস্তব জীবনের গল্প।তা যাই হোক মানুষ আগুনে জ্বলতে কেমন তা তখনি জানে যখন সে নিজে আগুনে হাত দেয়।ঠিক তেমনি কেউ এই ব্যর্থতায় না পড়লে ওই মানুষের কষ্ট বুঝে না।কিন্তু মানুষ এত দুঃখ,কষ্ট,হতাশা নিয়েও প্রত্যাবর্তন করে বাস্তব জীবনে,তাকে প্রত্যাবর্তন করতে হয় সেই সাফল্যের ঘুমন্ত শহরে যেখানে গুরত্ব দেওয়া হয় অর্থ,সম্পদ, মিথ্যে সুখের সফলতাকে।যেখানে মানুষের মেধাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না,যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন লিখে ভালো রেজাল্টকে।সেই হতাশাগ্রস্ত মানুষ আরো কষ্ট বেদনা নিয়ে ভাবতে হয় তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত  তাকে এই ব্যর্থতার জীবন চালিয়ে যেতে হবে।তাকে আবারো সেই শিশুকালে মত, শত হোঁচট খাওয়ার পর ও দাঁড়াতে হবে।অন্তত মিথ্যা হাসি দিয়েও নিজের দুঃখ, কষ্ট ন্যানো সেকেন্ড থেকে কয়েক ঘণ্টা ভুলে থাকতে হবে।তাকে প্রত্যাবর্তন করতে হয় সেই সফলতার ভীড়ে অসফল হয়ে সফল হওয়ার ভাবনায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি,মন মানসিকতা নিয়ে।কেউ প্রত্যাবর্তন করে স্বপ্নকে পরিবর্তন করে লক্ষ্যকে ঠিক রেখে।কেউ স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কেউ বা অন্যায় পন্থায়।কেউ বা নিজেকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে লক্ষ্যকে পরিবর্তন করে।তবে যে যেভাবে প্রত্যাবর্তন করুক না কেন তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না।উদাহরণ টেনে বলা যায় একজন শিক্ষার্থী স্বপ্ন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে আর লক্ষ্য মানুষের সেবা করা তখন সেই শিক্ষার্থী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হোক বা না হোক সে মানুষের সেবাই মগ্ন থাকবে।আর যে শুধু টাকা উপার্জনের জন্য ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই সে তার স্বপ্ন পূরণ না করলেও বৈধ বা অবৈধ পন্থায় সে টাকা আয় করে অনেক ধনী লোকে পরিণিত হবে।যার যার স্বপ্ন সার্টিফিকেটে ভালো রেজাল্ট সে খারাপ করা সত্ত্বেও সে কঠিন সাধনায় পরবর্তী রেজাল্ট  ভালো করবে না হলে প্রতিটি রেজাল্ট অন্যায় ভাবে ভালো করবে যদিও এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। তবে এখানে বলা বাহুল্য যে অধিকাংশ মানুষ তার আসল লক্ষ্যে পৌঁছানোর শক্তি হারিয়ে ফেলে।তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।তারা ভুলে যায় তার সাফল্যের উচ্চশিখরে পৌঁছানোর কথা।তবে সবার মাঝে উদাহরণ হয়ে কিছু মানুষ তার লক্ষ্যে তো পৌঁছায় সাথে তাক লাগিয়ে প্রত্যাবর্তন  করে পৌঁছে যায় সবার শীর্ষে।কিন্তু কথা হচ্ছে কেউ পারে কেউ পারে না কেন? আগে বলা হয়েছে অনেকে এমন মানুষকে কাছে পায় যে তাকে স্বপ্নের রাজ্য নিয়ে গিয়ে সাফল্যের কাহিনীগল্প শোনায়।তাকে পথ দেখিয়ে দেয় ব্যথর্তাই হচ্ছে সফল হওয়ার প্রথম সিঁড়ি। আর ব্যর্থতা থেকে জয়ে প্রত্যাবর্তন করা হচ্ছে শেষ সিঁড়ি যেখানে পাড়ি দিয়ে ছোয়া যায় সাফল্যকে যেখানে পৌঁছা মাত্রই পাওয়া যায় জীবনের সার্থকতা।তবে এদের মাঝে কিছু মানুষ নিজের উপর ঘৃণা করে।তারা হয়ে উঠে হাসিবিহীন, উল্লাসবিহীন মানুষ।তাদের মনে নাড়া দেয় সেই ব্যর্থতার গল্প যাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য তারা করে কঠিন সাধনা। যার ফলপ্রসূ হিসেবে তাদের দেয়ালে কড়া দেয় সাফল্য। আর যাদের নিজের উপর ঘৃণা থাকে না, পাশে পায় না এমন মানুষ যাকে তার মন খুলে কথা বলবে সেও তাকে কুটক্তি না করে তার সঙ্গ দিবে তারাই সমাজের ব্যর্থ মানুষ হিসেবে পরিচিত।যদি কেউ নিজের ব্যর্থতার উপর ঘৃণা পোষণের সাথে কঠিন সাধনা করে,যদি পেয়ে যায় সে স্বপ্ন রচনাকারী মানুষকে তাহলে সে চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছাতে পারলে সাফল্যের কিছুটা ফল উপভোগ করতে পারে।আর যে সাফল্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না তারা সফল মানুষের গল্প শুনে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিছু থাকে না।তারা হারিয়ে ফেলে মুখের সেই সুন্দর হাসি,শত আনন্দ উল্লাসের বিশ্রামে মনে ভেসে উঠে তার ব্যথতার গল্প।তিলে তিলে তার মনে পড়ে কপালের লিখন নাহি করা যায় না খণ্ডন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গালি দেয় নিজের কপালকে, স্বপ্নভঙ্গের মানুষকে।তবে যায় হোক সবাইকে জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে প্রত্যাবর্তন করতে হয়।সবাইকে ফিরে আসতে হয় সফলতার মৃত্যুর জীবনে। প্রত্যাবর্তন থেকে সফলতা পর্যন্ত তাদের দুঃখ, হতাশার কমতি থাকে না।সবকিছু ছাড়িয়ে কেউ সফল হয়ে নিজেকে নিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়।আর কেউ ব্যর্থ মানুষ হিসেবে নিজের জীবনের ইতি টানে।সবার চোখে রয়ে যায় ঘৃণার পাত্র, মূখ্য মানুষ  হিসেবে।প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে হয়ে যেতে হয় যন্ত্র।তার থাকে না কোন অনুভূতি।তবে সফলতা তার সব কিছু ভুলিয়ে প্রমাণ করে দেয় সৃষ্টিকর্তা কেন মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

প্রত্যাবর্তন প্রত্যাবর্তন Reviewed by Catalytic School on September 03, 2020 Rating: 5

No comments:

Search

Powered by Blogger.