মনন বিকাশে শিল্পকলা
দেওয়ান তাসিন লাবিব
মানব ইতিহাসের একেবারে গোড়ায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগে জীবনের প্রয়োজনে শিল্পকলার উদ্ভব হয়েছিল।সে সময় মানুষ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল । তাই প্রকৃতিকে বশে আনতে এবং জীবনধারণের জন্য আহার্য সংগ্রহের নিমিত্তে মানুষ জাদুবিশ্বাস থেকে গ্রহান্তরে শিকারে যাবার পূর্বে চিত্র অংকন করতেন এবং শিকার শেষে শিকার করা পশুকে সামনে রেখে তার চারপাশে ঘিরে সকলে মিলে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে আনন্দ প্রকাশ করতেন।
শিকার করা সহজ কৌশল হিসেবে আদিম মানুষ শিকার করা পশুর লোমশ চামড়া, শিং ইত্যাদি পরিধান করে পশুর দলের সাথে মিশে গিয়ে তাদের অনুকরণে হাঁটা, লাফানো,দৌড়ানো ইত্যাদির অভিনয় করে পশু শিকার করতেন এবং এখান থেকেই অভিনয়শিল্পের শুরু। শরীরে পরিধান করতেন গাছের ছাল ,লতাপাতা ,পশু ও মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি অলংকার। এভাবেই শিল্পকলায় যাত্রা।
লুইস হেনরি মর্গান তার বিখ্যাত গ্রন্থ- The Ancient Society -তে মানব সমাজের ক্রমবিকাশের ধাপকে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে মানুষকে সভ্যতার দ্বারে পৌঁছাতে প্রথমে বন্য দশা ও পরে বর্বর দশা অতিক্রম করতে হয়েছে। এই যুগ পর্বে মানুষ গাছের ডালপালা ও ধারালো পাথর দিয়ে হাতিয়ার বানাতে শেখে। আগুনের আবিষ্কার মানুষকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।মানুষ মৃৎপাত্র বানানো শিখে। ধীরে ধীরে মানুষ কৃষিকাজ ও পশু পালনও শুরু করে।এইভাবে মানুষ সভ্যতায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। প্রত্নপ্রস্ত ও নব্য প্রস্তর যুগে মানব সভ্যতা অনেক উন্নতি করে। চাকার আবিষ্কার নবোপলীয় মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে এবং ভাষা আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে শেখে । লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের পূর্বে আমরা আদিম মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের গুহাচিত্র ব্যবহৃত বস্তু সামগ্রী ইত্যাদি শিল্প থেকে। আজকের যে বর্ণভিত্তিক লিপি তার জন্ম মিশরীয়দের চিত্রলিপি যাকে বলা হয় হায়ারোগ্লিফিক।
যুগে যুগে মানুষ সভ্যতা ও শিল্প হাত ধরাধরি করে বিকাশ লাভ করেছে। এই বাংলা সমৃদ্ধ মানব সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে আমরা পায় মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, উয়ারী-বটেশ্বর ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে সমৃদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রত্ন তাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে সকল স্থান থেকে অনেক প্রাচীন শিল্প নিদর্শন সমূহ যেমন পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটির শিল্প পত্র, মাটির পাত্র, পাথরের মূর্তির, খিলান, শিলালিপি ইত্যাদি এসব নিদর্শন থেকে আমরা সমৃদ্ধ অতীতের কথা জানতে পারি। সৈয়দ আলী আহসান শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শিল্পকলা হচ্ছে মানবকুলের উচ্চমানের সৃষ্টিমূলক রূপায়ণ যা সাধারণের রসবোধ এর জন্ম দেয়। একটি দেশ বা জাতির বিকাশে শিল্প সংস্কৃতির ভূমিকা অনন্য।
শিল্পের সাথে সংস্কৃতির একে অপরের সাথে সংযুক্ত।একটি দেশ বা জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি পরিবেশ, মানুষের জীবনধারা রীতি-নীতি, দেশাত্মবোধ মানবতার মূর্ত প্রতীক।
"শিল্পের শিকড় প্রকৃতির মাঝে পতিত হওয়া উচিত, তা না হলে তা বোকার কৌতুকে পর্যবসিত হবে" -হ্যাজলিট।
"স্রষ্টার একটি উপহার হল শিল্প এবং তার মহিমা প্রকাশের ব্যবহার হওয়া উচিত" - লংফেলো।
Reviewed by Catalytic School
on
September 10, 2020
Rating:


No comments: