গ্যাং নির্ভর কিশোর সংষ্কৃতি
দেড়শো বছর আগের লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর কথা দিয়ে শুরু করি। বেশিরভাগ দেশগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল কিশোরেরা।
কিশোরের আবার দুইটা টাইপ রয়েছে। একটা হচ্ছে- উগ্রপন্থি আর অন্যটা হলো আগামীর স্বপ্নবাজ ।
কিন্তু সেই সময়ের রাজনৈতিক কাঠামো এতটাই দূর্বল ছিলো যে দেশের নিয়ন্ত্রণভার উগ্রপন্থি কিশোরেরা টেনে নেয়। চারদিকে অরাজকতা। খুন-ডাকাতি-ছিনতাই-মারামারি-ধর্ষণ নিত্য নৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নও বাদ যায়নি। চারদিকে সমস্যা বিকারগ্রস্থ সমাজ ব্যবস্থা।
দেশের পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছিল কিশোর গ্যাং আর ক্লাব। বর্তমান যাকে আমরা ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব হিসেবে চিনি সেটাও ছিলো একটা কিশোর গ্যাঙের তৈরি করা ক্লাব। যারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল।
কিন্তু পরিবর্তনের ঝড় উঠে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা গন্তব্যহীন ভবিষ্যতের আগাম বার্তা পেয়ে ক্লাবগুলোকে পরিবর্তন করে খেলাধুলার ক্লাবে পরিণত করে। অর্থাৎ জন্ম হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো বিশ্ববিখ্যাত ক্লাব। তাদেরকে পাড় হতে হয়নি অন্ধকারের ভাঙা সাঁকো। লাতিন আমেরিকা ফিরে পায় তাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যে গড়া যুবসমাজকে। উন্নতির আসনে চালক হিসেবে বিশ্বমাতায় তারা।
এবার আসা যাক দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান প্রেক্ষাপট। ঠিক যেন ফিরে দেখা ১৫০ বছর আগের সেই বর্বতার কাহিনী। পাড়ায় মহল্লায় গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। বড়ভাই-ছোটোভাইয়ের নাম বেচাবেচি। দাঙা-হাঙ্গামা-মারামারি-ইভটিজিং একেবারে অপরাধ জগতের সব। সামাজিক মাধ্যমের সয়লাভ। নিজেকে উপস্থাপন করানোর জন্য প্রচেষ্টা সব মাধ্যমের ছড়াছড়ি। আমরা নাকি ইন্ডিয়াকে আইডল মানি। রিসেন্টলি ইন্ডিয়ায় ১৮৮+ চায়না পণ্য ব্যান করা হয়েছে। কারণ ইন্ডিয়া পরিবর্তনের ধারা আনতে চাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে একটা তরুণ দল তৈরি করতে যাচ্ছে। আর আমরা এখনো লাইকি আর টিকটককে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি, ব্যান করা তো দূরে থাক। দেশের রাজনীতি এখন স্কুলের চৌকাঠে। বড়ভাইয়ের দায়িত্ব পেতে মরিয়া হয়ে চেয়ে থাকে সবাই। ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত সবাই। সবাই কোনো না কোনো ছত্রছায়ার আদলে বেড়ে ওঠা বীজ। যার ফল বিষিয়ে তুলে শান্তিপ্রিয় মানুষদের। এখন নীতিকে বিসর্জন দিয়ে দূর্নীতির আদলে গড়ে উঠছে সমাজ। “ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ”- চরম সত্য কথাকে আমরা কোন ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এরকম একটা সময়ে এসেও আমি এখনো এধরণের প্রভাব মুক্ত। তাই নিজেকে নিজে বলি “সাবাস”। যেখানে সোসাইটিতে গড়ে উঠবে পাঠাগার-খেলাঘর, সেখানে আজ গড়ে উঠছে পলিটিক্যাল ক্লাব। যার বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোর। আকাশ আর মাটি যেন মিশে গেছে সুগভীর প্রশান্তে। এখনো কন্টেন্ট নির্মাণ নিয়ে তেমন কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। পর্দা ফাঁস হলো তো , তবেই তার বিচার। তারও পাশাপাশি গ্যাং নির্ভর চলচিত্র উসকে দিচ্ছে কোমল মস্তিষ্কগুলোকে। যার পরিণতি খবেরর হেডলাইন আর ফেসবুকের টাইমলাইন।
আসো ক্রিয়েটিভ কিছু করি। অশান্তির দূস্তর পথ ছেড়ে শান্তির ছায়াতলে। সোসাইটির নিয়ম পরিবর্তন এনে এগিয়ে নিয়ে যাই আগামীর ভবিষ্যতকে। আরে আমরাই তো আগামী..
লেখক:
Muhammad Asifur Rahman Khan (Founding Executive )
Head of Writing Team, Catalytic School
Source:
No comments: