বকুল বনে নকুল আছে এখনো?

নাঈমা সিরাজি




একটানা কোকিলের ডাক শুনা যাচ্ছে। ডেকেই চলেছে। পাশ থেকে ফায়িজা বলল, 
-এই মাইশা, কি করিস? 
-কোকিল ডাকছে.... শুনছি... 
-কোকিল? এই গ্রীষ্মে কোকিল পেলি কোথায় তুই? 
বলেই ফায়িজা খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো। এই কোকিলের ডাক ফায়িজা কখনো শুনবে না। বকুলের গন্ধও পাবে না। শুধু মাইশা দেখতে পাবে। শুনতে পাবে। শুধু তো নামটা জানা হলো। 
সারি সারি বকুলের গাছ। মাঝে কিছু অন্য গাছও রয়েছে। বসন্তের ছোয়াঁয় গাছগুলোতে বেশ গাঢ় রঙ ধরেছে। পাখিরা ডেকে চলেছে। 
মাইশা বকুল বন ধরে হাটছে। বায়োলজি অলিম্পিয়াড ক্যাম্পের পার্টিসিপেন্ট সে। এইবনে সে যেসব গাছ দেখবে  সবকটির নাম, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি নোট করাই তার কাজ। কিন্তু মাইশা শুধু বই চিনে। বইতে অনেক গাছের নাম, বৈশিষ্ট্য পড়েছে কিন্তু বাস্তবে তা দেখে নি। বকুলবনটার শুরুতে সে যে গাছটা দেখে তার পাতা সবুজ, কান্ড বেশ নরম, লতার মতো করে জুড়ে রয়েছ, ফুল গুলো গোলাপি বর্ণের। ফুল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে সে বললো, 
-এটা অর্কিড হতে পারে। অর্কিডের বৈজ্ঞানিক নাম Aerides odorata। 
সে এটি খাতায় লিখছিলো। হঠাৎ পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো, 
-ওটা অর্কিড নয়। ওটা বাগানবিলাস... 
মাইশা তাকিয়ে দেখলো বেশ দীপ্তিময় হাসিমাখা মুখে কেউ একজন তাকে সংশোধন করে দিলো। কিছুটা লজ্জায় পড়লো। তারপর লিখে নিলো, 
"গাছঃ বাগানবিলাস।  
বৈজ্ঞানিক নামঃ Bougainvillea spectabilis"। 
আবারও সেই হাসিমাখা মুখ বললে উঠল, 
-বেশ ভালোই জানো। কিন্তু চিনে উঠলে না। 
-আপনি..... 
-আমিও তোমার মতো একজন পার্টিসিপেন্ট। নারায়নগঞ্জ হতে এসেছি। 
-ও... 
লোকটা পিছন ঘুরে নিজের পথ চলা শুরু করলো। কিছুক্ষণ তার চলে যাওয়া দেখে মাইশা আবারও নিজের কাজে মন বসায়। 
এইটুকু ঘটনা তেমন বিশেষ না হলেও বিশেষ কিছু তৈরি হওয়ার আগে কিছু সূচনার প্রয়োজন হয়। মাইশার জন্য বিশেষ কিছুর সূচনাই এটি। 
লোকটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই মাইশার কাজে যেন একটা বাঁধা পড়ে গেলো। আজকে সারাদিন এই বনে ঘুরে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। কালই এর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। 
গাছ সম্পর্কে তার রিপোর্ট তৈরি করা শেষ। এরপরে এরিয়া শুরু হবে শুধু পাখির জন্য। এই অংশেও শুধু বকুলের গাছ। বকুলের মিষ্টি গন্ধে ভরপুর সবটা অংশ। 
নানারকম পাখির কিচিমিচির ডাক। হঠাৎ শুনতে পেল কোথায় যেন কোকিল বেশ করুণ করে ডাকছে... 
মন দিয়ে শুনছিলো কোকিলের ডাক... ডেকেই যাচ্ছে।  কোকিলের ডাক শুনতে শুনতে বেখেয়ালি হয়ে গেলো। হঠাৎ এক ঝাঁক কাক কোথা হতে এসে এক সঙ্গে ডেকে উঠল,  
কা কা কা...  
হঠাৎ এতো বিকট শব্দে ঘোর ভাঙ্গায় কিছুটা ভয় পেলো সে। তারপর লিখতে শুরু করলো, 
"পৃথিবীতে কাকের প্রজাতি সংখ্যা ৪৩। কাক (Corvus) গণের।" 
আবারও সে কন্ঠ বলে উঠল, 
-কোকিলের কথা তো লিখলে না? 
-আপনি কি আমাকে অনুসরণ করছিলেন? 
-হ্যাঁ, কিন্তু না। 
মাইশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। মাইশা কিছু বললো না। সে কন্ঠই আবার বলে উঠলো, 
-আপনার নোট বুকটা দিন। আপনি তেমন কিছুই নোট করেননি। আমি ঠিক করে দিচ্ছি।  দিন ওটা আমাকে। 
মাইশা নোট বুকটা দিলো। খানিক সময় নিয়ে পুরা নোট বুক লিখে দিলেন। মাইশা পাশে বসে শুধু কোকিলের সুর শুনে গেলো। নোট বুক ফিরিয়ে দিয়ে বললো, 
-আজ তাহলে আসি? 
-আপনাকে ধন্যবাদ... 
একটু হেসে বলল, 'মিস মাইশা, আপনি যথেষ্ট তথ্য উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আপনি আয়ডেন্টিফাই করতে ভুল করেছেন'। 
-আমার নাম... 
- আজ তবে যাই? 
বলেই সে এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলো না।  সঙ্গেই যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো। মাইশা নিজের ক্যাম্পে এসে ক্যাম্প কমান্ডারকে নোট বুক সাবমিট করে। ক্যাম্প কমান্ডার কিছুক্ষণ নোট বুক দেখে বললো, 
-বাহ। দারুণ কাজ করেছো। 
-জ্বি... 
একটা অস্থিরতা কাজ করছিলো তার মধ্যে। পরেরদিন সকালে একটা বড়ো মাঠে সবাই জড়ো হলো। এক্ষুণি ঘোষণা করা হবে বিজয়ীর নাম। কিন্তু মাইশা তখনও সেই অচেনা কন্ঠস্বরকে খুঁজে চলছিলো। নামটা যে আদৌ জানা হলো না? 
হঠাৎ ঘোষণায় শুনা গেলো, 
"মাইশা নাওয়ার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ".... 
ক্যাম্প কমান্ডার আনন্দে এতো দিশেহারা হয়ে গেলো সে কি বললো
বুঝা গেলো না। মাইশা এগিয়ে গেলো। তাকে সম্মাননা  দেওয়া হবে। 
মাইশার দৃষ্টিশক্তি যতদূর যায় তাতে সে শুধু নারায়ণগঞ্জের বাসটাই খুঁজে।  নামটা যদি জানা যায়? শুনতে পেল, 
-আমাকেই খুঁজছিলে তাই না? 
-ইয়ে মানে না.... 
-তাহলে যাই? চট্টগ্রাম কখনো গেলে তোমাকে কল দিবো। 
-আমরা কিছু প্রশ্ন ছিলো... 

-অবশ্যই... 

-আমার নাম, আমার ব্যাপারে জানা? 

-আমি কোন পার্টিসিপেন্ট না। আমি নারায়ণগঞ্জ টিমের ক্যাম্প কমান্ডার। তোমাকে শুরুতে দেখেছিলাম। আগ্রহের কারণে তোমার ব্যাপারে জানা হয়ে গেল। 

-আপনার নাম? 

-নকুল। সাদাভ ইসলাম নকুল। 

এখনো বকুল বনে খুঁজে বেড়ায় নকুলকে... নাম ছাড়া যে আর কিছুই জানা হলো না!

বকুল বনে নকুল আছে এখনো? বকুল বনে নকুল আছে এখনো? Reviewed by Catalytic School on August 07, 2020 Rating: 5

No comments:

Search

Powered by Blogger.