তেলাপোকা

সাদিয়া প্রত্যাশা সারা
আমার রুম পর্যন্ত রক্ত এসেছে। খুন টা করেছি ড্রয়িং রুমে রক্ত গড়াতে গড়াতে এই পর্যন্ত চলে এসেছে। একজন ৫৫+ বয়সের লোককে খুন করতে তেমন একটা কস্ট হয়নি,এমনকি আমার গায়ে একটা আচঁর ও লাগেনি। কারন, সে ঘুমন্ত ছিলো।  যাই হোক, যাকে খুন করেছি সে আমার বাবার মত। বাবা আর বাবার মত দুইজনের মধ্যে তফাত আছে।
আমি তখন খুব ছোট, বয়স ৩ বছর বা তার থেকে একটু বেশি যখন আমার মা এই লোককে বিয়ে করেন। আমার আসল বাবা একটু দূর্বল মনের মানুষ ছিলেন। মা ছেড়ে আসার পরই সে আত্মহত্যা করেন। আমরা দেখতেও যাই নি। আসলে মা নিয়ে যায়নি। তার নতুন হাজবেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এইভাবে।
"নিলু, তোমার বাবা। আজকের থেকে ওনাকে বাবা বলে ডাকবে"
আমি বাবা ডাকতাম। আমরা কুমিল্লা ছেড়ে যশোরে এসেছি সেই ছোটবেলাতেই। এখানকার কেউ জানেন না যে তিনি আমার আপন বাবা নন। ছোটবেলায় এই লোকের হাত ধরে আমি বড় হয়েছি। আপন বাবার মত আমার সব শখ গুলো পূরন করেছেন তিনি। প্রতিবছর আমার জন্মদিন পালন করা হতো খুব ধুমধাম করে। আমার ক্লাসে অন্য সব মেয়েদের থেকে আমার পুতুলের কালেকশন বেশি। এগুলা সব আমার বাবার কিনে দেয়া।আমাকে বাবা ডাকতো "নিলুপরি" হ্যাঁ আমি বাবার নিলুপরিই ছিলাম। এখন প্রশ্ন আসছে তাহলে আমি কেনো খুন করলাম আমার বাবাকে?
আচ্ছা লজিক দিচ্ছি। আমি এই বছর নবম শ্রেণিতে উঠলাম। আমাদের ক্লাসে এখন তেলাপোকা কাটা শিখাচ্ছে। একটা তেলাপোকার পেটে কি কি আছে তা কেটে দেখাতে হবে।  আমার ক্লাসের বেশিরভাগ মেয়েরা তেলাপোকা ধরতেই ভয় পায়। সেখানে আমি আস্ত একটা তেলাপোকা নিজে ধরে নিয়ে গিয়েছিলাম।  এর পিছনে বিশেষ কারন হলো।  তেলাপোকাটা আমার জামায় ছিলো, আমি জামাটা পড়ে বাইরে বের হয়েছি খেয়ালও করি নি। আমার জামার ভিতরে বসে তেলাপোকাটা আমার পুরো শরীর হেটে বেরিয়েছে। আমার বিশেষ জায়গাগুলোই হেটে বেড়িয়েছে। আমার পুরো শরীর সে নোংরা করেছে। টের পেয়ে আমি বাসায় ফিরে তেলাপোকা টা জামা থেকে বের করি। এরপর কৌটায় ভরে রাখি। আমি গোসল করে আসি৷
তেলাপোকা টা স্কুলে নিয়ে এসেছি। আজকের ওকে কাটবো। ওর উপর আমার বিশেষ রাগ কাজ করলো।  ওকে কাটতে গিয়ে আমি মজা পেয়েছি। মনে হয়েছে,উচিত শিক্ষা দিতে পেরেছি। অইদিন থেকেই আমার বড় একটা তেলাপোকা কাটার শখ হলো।  গত ৯ বছর ধরে একটা তেলাপোকা আমার শরীর নোংরা করছিল। বিশেষ জায়গাগুলোতেও নোংরা করতো প্রতিনিয়ত আমি ঠিক করে বসলাম যে বড়  তেলাপোকাটাকে এইভাবে কাটবো। কিন্তু আফসোস,  আমি ছোট তেলাপোকার মত কুচিকুচি করে কাটতে পারিনি। পাখা টেনে ছিড়ে দিতে পারিনি। কিন্তু হ্যাঁ আমি গলা কেটে দিয়েছি। একটা ছুড়ি দিয়ে ইচ্ছামতো কুপিয়েছি।
বড় তেলাপোকাটা শেষ বারের মত বলেছিলো, "নিলুপরি আমি তোর বাবা"
আমার খুব জোরে হাসি পাচ্ছিলো। বাবা? আচ্ছা আমার বাবার চকলেট দেয়ার একটা বিশেষ নিয়ম বলি। আমার বাবা রোজ চকলেট নিয়ে আসতো। ৫ টাকা দাম ছিলো।  কিন্তু চকলেট দেয়ার নিয়ম ছিলো দুইটা। যেদিন মা বাসায় থাকতো, আমার হাতে চকলেট দিয়ে বাবা আমাকে কপালে একটা চুমু দিতো। আর যেদিন মা বাসায় থাকতো না সেদিন আমাকে চকলেট আনতে যেতে হতো বাবার রুমে নয়তো বাথরুমে। জানেন, ৫ টাকার চকলেটের জন্য আমাকে বাবার অন্য রুপ দেখতে হতো।  বাবার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে হেটে আসতে কস্ট হতো৷ মাঝে মাঝে তোহ আমার বিছানা নস্ট হতো আমার রক্তে।
৫ টাকার চকলেট খুব দামী মনে হতো আমার কাছে।
আজকেরও আমার মা ছিলেন না। এর আগে মা বাসায় না থাকলে আমি ভয়ে থাকতাম। অনেক বার মা কে বলছি। বাবার চকলেট দেয়ার গল্প। মা বলছিলেন," চুপ, এগুলা আর কেউ যেনো না শুনে। মানুষের বাসায় এমন অনেক কাহিনি হয়, যা অন্যদের বলতে নেই,তাহলে খারাপ ভাব্বে"
এরপর থেকে আর বলতাম না কিছুই। আজকের আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম বাবা কখন আসবে। এইরকম অপেক্ষায় আমি ছোটবেলায় থাকতাম। যখন বাবা আমার কাছে কেবল বাবাই ছিলো। বড় তেলাপোকা না।
বাবা বাসায় এসেই সোফায় টিভি দেখতে বসলেন। কি যেনো মুভি দেখছিলেন। আমি ভেবেছিলাম আজকের ও চকলেট নিতে ডাকবেন কিন্তু আজকের তা করলেন না। সোফায় ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমিও তেলোপোকা কাটার সুযোগ পেয়ে গেলাম।
সকাল হতে বেশি সময় বাকি নেই। আজকের আমি সকাল হতে দেখবো।  বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে থাকবো। সুন্দর এক সকাল হবে আজ। আজকের মা এসে দরজা খুলেই অবাক হয়ে যাবে। মনে হয় না মা এত রক্ত আগে কখনো দেখেছেন।
আমি তখন মায়ের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলবো।
"চুপ করো মা। এই শহরের অনেক বাড়িতে অনেক কাহিনি ঘটে যায় সেগুলো কাউকে বলতে নেই,সবাই খারাপ ভাব্বে তোহ।"


তেলাপোকা তেলাপোকা Reviewed by Abdul Hannan Akib on July 30, 2020 Rating: 5

No comments:

Search

Powered by Blogger.